কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি: অন্যান্য সময় লোকদেখানো অভিযান হলেও কেরানীগঞ্জে এবার যৌথ বাহিনীর সহায়তায় বড়সড় অভিযান চালিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ(রাজউক)। জলাশয় ভরাট করে আবাসন প্রকল্প নির্মাণ, নকশা বহির্ভূত ও অনুমোদনহীন ভবন অপসারণে এ উচ্ছেদ অভিযান চালায় তারা।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) সকাল থেকে শুরু হওয়া উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্ব দেন রাজউক এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল ইসলাম।
এসময় টোটাইল মৌজায় অবস্থিত শতাধিক প্লটের সীমানা প্রাচীর, বেশ কয়েকটি ভবনের আংশিক অংশ, বৈদ্যুতিক খুঁটি, সাইনবোর্ড, গেট ভাংচুর ও ভরাট করা অংশের রাস্তা বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ কোন প্রকার নোটিশ না দিয়েই রাজউকের অভিযানে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। তবে রাজউক বলছে এগুলো সিএস রেকর্ড মোতাবেক সরকারি সম্পত্তি, মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশনের আদেশ অমান্য করে এই জায়গা ভরাট করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী শাহজাহান জানান, বিশ বছর আগে তিন পর্চার নির্ভেজাল জমি ক্রয় করে ভোট দখল করে আসছি। গরীব মানুষ ভাড়া থাকতে কষ্ট হয় তাই ছোট একটি টিনের ঘর করেছিলাম থাকার জন্য কিন্তু কোন নোটিশ না দিয়ে কাগজপত্র না দেখে আমার ঘর ভেঙে দিলো। টিনের ঘর করতেও কি রাজউকের অনুমতি লাগিবে?
স্থানীয় মর্তুজা আলীর অভিযোগ, বাপ-দাদার সম্পত্তিতে একটু শাকসবজি করে খাই। ছোট্র একটি ঘর ছিলো আধাপাকা, ভাই বোনের যার যার অংশ আলাদা দেয়াল ছিলো, বহু আকুতি মিনতি করেও দেয়াল আর ছোট্ট ঘরটা রক্ষা করা গেলো না। রাজউক বলছে এটা খাল ছিলো আসলে এটা নাল জায়গা। রক্ষক হয়ে ভক্ষকের কাজ করলে আমাদের মরা ছাড়া উপায় নাই।
স্থানীয়রা বলছেন বিগত কয়েকদিন আগে রাজউকের উচ্ছেদ অভিযান কালে আভিযানিক দল ও সাংবাদিকদের উপর হামলার কারণে রাজউক কোন কাজপত্র না দেখেই নির্বিচারে অভিযান চালিয়েছে। আশপাশে বহু আবাসন প্রকল্প থাকলেও বারবার একই জায়গায় অভিযান চালানোর কারণে নানা মুখে নানান কথাও শুনা গেছে। তাছাড়া মামলার কারণে পুরুষ শূন্য এলাকাটিতে অভিযান কালে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, ডিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি জনমনে আতংক সৃষ্টি করে।
এব্যাপারে অভিযানে অংশ নেওয়া প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম বলেন, তারানগর ইউনিয়নের টোটাইল মৌজায় নয় একর আয়তনের জলাশয়টি স্থানীয়ভাবে পরিচিত ‘টোটাইল বিল’ নামে। বিলটি সিএস ১ ও ১০ দাগে খাল হিসেবে রেকর্ডভুক্ত। উল্লিখিত মৌজাগুলো জলাভূমি হিসেবে চিহ্নিত। কিন্তু আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য নির্বিচারে খালের জলাশয় ও সংলগ্ন কৃষি উপযোগী নিচু জমি ভরাট করা হচ্ছে। অভিযানের অংশ হিসেবে গত কয়েকদিন আগে রাজউকের উচ্ছেদ অভিযানে হামলা চালিয়ে সাংবাদিকসহ কয়েকজন কে আহত করে। তাই আমরা যৌথ বাহিনীর সহায়তায় আজ অভিযান চালাচ্ছি, এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
অভিযানকালে পুলিশ,র্যাব,বিজিবিসহ উপস্থিত ছিলেন, জোন পাঁচ এর পরিচালক হামিদুল ইসলাম, কেরানীগঞ্জ মডেল থানার সহকারী কমিশন (ভূমি) জান্নাতুল মাওয়া, অথরাইজ অফিসার মেহেদী হাসান খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কেরানীগঞ্জ সার্কেল) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, কেরানীগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ সোহরাব আল হোসাইনসহ অনেকে।
আপনার মতামত লিখুন :