শামসুল ইসলাম সনেট,কেরানীগঞ্জ: রাজধানী ঢাকার শাকসবজির অন্যতম দোকানদাতা কেরানীগঞ্জে সবজি এখন কৃষকের গলার কাটা!! কদিন আগেও প্রতি পিছ ফুলকপি, বাধাকপি বিক্রি হতো ৩০/৪০ টাকা সে কপি এখন বিক্রি হচ্ছে ৫/৭ টাকা। খোলা বাজারে প্রতি কেজি মুলা ৩০/৪০ টাকা করে বিক্রি হলেও পাইকারি বাজারে বিক্রি হয় ২ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৫ টাকা পিছ। একই ভাবে শিমের কেজী ১০ টাকা, শাকের আটি ২ থেকে ৫ টাকা। অনেক সময় কৃষকের কষ্টে রোপন করা শাকসবজি বিক্রি করতে না পেরে জমিতেই নষ্ট করছেন, কেউ নতুন করে আবাদ করতে শাক-সবজি তুলে ফেলে দিচ্ছেন আবার কেউবা নামমাত্র মুল্যে বিক্রি করে পরিস্কার করছেন জমি। এতে করে কৃষকরা হচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত, আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষিতে। তাদের অভিযোগ সার বীজের উর্ধগতি এবং বাজারের সঠিক তদারকি না থাকার কারণেই কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলছেন, অপরিকল্পিত এবং একই সময় কৃষকের অতিরিক্ত শাক সবজি আবাদে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষকরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে ঢাকার শাকসবজির অক্সিজেন খ্যাত কেরানীগঞ্জের কলাতিয়া হযরতপুর এবং পাশের উপজেলার ভাকুর্তা, জামির্তা ইউনিয়নের মাঠ জুড়ে সবুজে সমোরোহ। যতদিন চোখ যায় বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, কাঁচামরিচ, মূলা, করলা, লাউ, গাঁজর, লালশাক, পালংশাক, নাপা শাকসহ বিভিন্ন জাতের দেশি-বিদেশি সবজিতে ভরে আছে দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ। কেউ ক্ষেতের সবজি তোলা আবার কেউ সবজি ফেলা নিয়ে ব্যস্ত, কেউ কীটনাশক স্প্রে করছেন। কেউ কেউ আবার জমি প্রস্তুতি করছে আবাদের জন্য। কৃষকের ব্যাস্ততা না কমলেও থমকে গেছে রুজিরোজগারের পথ! জমির ফসল এখন যেনো তাদের গলার কাটা। তাই কৃষকের মুখে নেই কোন হাসি, চেহারায় শুধু হতাশা আর ক্লান্তির ছাপ!
হযরতপুরের লংকারচর গ্রামের কৃষক আহসান উল্লাহ বলেন, খুচরা বাজারে মুলার কেজি ৩০ টাকা, ফুলকপির পিছ ৩০/৪০ টাকা, সিমের কেজি ৪০ টাকা, শাকের আটি সর্বনিন্ম ১০/২০টাকা অথচ আমরা এসব বিক্রি করতে পারছি না। প্রতি মণ মুলা তোলা এবং পরিবহন খরচ ১০০ টাকার উপর অথচ বিক্রি হয় ১৫০ টাকায়। আবার অনেক সময় বিক্রিও হয় না। ফুল কপিও তাই, ৫ টাকা পিছ কপি বিক্রি করে পরিবহন খরচও হয় না তাই এসব বাজারে না নিয়ে ফেলে দিচ্ছি।
শিম চাষি জামিলা জানান, প্রতিবছর শিম বিক্রি করে গরু কিনি, সংসার চালাই, টাকা ব্যাংকেও রাখি কিন্তু এবার ২ লাখ টাকা খরচাও উঠবে না। এতো সুন্দর সিম বিক্রি করতে গেলে ১০ টাকার বেশি বিক্রি করা যায় না। অথচ এক কেজি সিম উঠাতেই ১০ টাকা খরচ।
এদিকে কৃষকের পাশাপাশি শাকসবজির দাম কমে যাওয়ায় বিপাকে আড়ৎদাররাও। তারা বলছেন শীতকালীন সবজিতে ভরপুর বাজার। সরবরাহ বাড়ায় সব ধরনের সবজি বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে । আলুর কেজি ২৫, শিম ১০, বেগুন-করলা ২৫ এবং টমেটো পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। সবচেয়ে কম ২ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে মুলা। আর ফুলকপি ৫, বাঁধাকপি ১০, মিষ্টি কুমড়া ১০/১৫ টাকা, কাঁচা মরিচ ২০ টাকা ও পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মহুয়া শারমিন মুনমুন বলছেন, গতবছর ভালো দাম পেয়ে কৃষক উচ্চমূল্যে বিচ ক্রয় করে অতিরিক্ত ফসল ফলিয়েছে। একই সময় অতিরিক্ত সবজি বাজারে চলে আসায় দাম কমে গেছে। কৃষকরা কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে পরামর্শ করে আবাদ করলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কমে আসবে।
আপনার মতামত লিখুন :