সাতক্ষীরায় পৈত্রিক জমি জবর-দখলের প্রতিবাদে মানববন্ধন


ঢাকার চোখ প্রকাশের সময় : এপ্রিল ২৪, ২০২৩, ৫:০৫ অপরাহ্ন
সাতক্ষীরায় পৈত্রিক জমি জবর-দখলের প্রতিবাদে মানববন্ধন

সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার কুলিয়া ইউনিয়নের শশাডাঙ্গা গ্রামে পৈত্রিক ও ক্রয়কৃত সম্পত্তি জবর-দখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) সিরাজুল ইসলাম, মোকছেদ গাজী ও ছামছুর বিশ্বাসের নেতৃত্বে প্রায় ৩০-৪০ জনের একদল সন্ত্রাসী জমি দখল নেওয়ার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ করে ভুক্তভোগী পরিবার। এ সময় পুলিশের বাধায় তারা ফিরে যেতে বাধ্য হয়।

সোমবার (২৪ এপ্রিল) সকাল ১০টার দিকে ওই জমির ওপর দাঁড়িয়ে মানববন্ধনে এসব দাবি করেন ভুক্তভোগী পরিবারবর্গ ও এলাকাবাসী। এ দিকে মানববন্ধন চলাকালীন তাদের রেকর্ডকৃত জমিতে ছামছুর বিশ্বাসের নেতৃত্বে কিছু লাঠিয়ালবাহিনীকে বেড়িবাঁধ দিতেও দেখা যায়।

ভুক্তভোগী পরিবারবর্গ পক্ষ থেকে আ. রহিম সরদার বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) বহেরা গ্রামের মৃত আব্দুল শাহ’র ছেলে সিরাজুল ইসলাম, পুষ্পকাটি গ্রামের কেয়ামদ্দিন গাজীর ছেলে মোকছেদ গাজী ও শশাডাঙ্গা গ্রামের মৃত. ছাকাত বিশ্বাসের ছেলে ছামছুর বিশ্বাস মিলে সন্ত্রাসী দলবল নিয়ে এসে আমাদের পৈত্রিক জমি দখল নেওয়ার চেষ্টা করে, তখন আমরা থানায় এই বিষয়ে অভিযোগ করি; থানা পুলিশ এসে এই সম্পত্তি জবর দখলের চেষ্টা বন্ধ করে।

কিন্তু সাতক্ষীরা টাইমস ২৪ ডটকম ও দৈনিক সাতক্ষীরার সকালসহ কয়েকটি সরকারি অন-অনুমোদিত পোর্টাল ‘দেবহাটায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে জমি দখলের চেষ্টা; দুজনকে কুপিয়ে জখম” এই শিরোনামে আমাদের বিরুদ্ধে গত ২০, ২১ এপ্রিল মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করে। মিথ্যা ও একপাক্ষিক সংবাদ প্রকাশ করায় আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। সরকারি অন-অনুমোদিত পোর্টাল এবং এই সব ভুঁইফোড় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধও জানান তিনি।

এ সময় রহিম সরদার ভাই করিম সরদার বলেন, ‘আমার বাবা মৃত জসিমউদ্দীন সরদার ১৯৬৪ সালে তৎকালীন ভারত থেকে বাংলাদেশে এসে বিনিময়কৃত সম্পত্তি অধিক্ষেত্রাধীনে ৯৩ বিঘা সম্পত্তি ক্রয় করেন। সেই ১৯৬৪ সাল থেকে আমরা এই জমি বৈধভাবে ভোগদখল করে আসছি। আমার বাবা এই জমির মধ্যে যেগুলো বিক্রি করেছিল, সেগুলো ক্রেতারা ভোগদখল করছে। এই জমির বিনিময় দলিল, ভূমি অফিস, ইউনিয়ন পরিষদের প্রত্যয়নপত্রসহ হাইকোর্টের রিট পিটিশন ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ১৪৫ ধারার মামলার রায় অনুযায়ী এই জমি দখলসত্ত্ব আমাদের।’

কিন্তু সিরাজুল, মোকছেদ ও ছামছুর আদালতের নির্দেশ অমান্য করে জোরপূর্বক এই জমি দখল নেওয়ার চেষ্টা করছে। এই জমিতে তাদের কোনো রেকর্ড এবং কোনো ধরনের শর্ত নেই। তবুও, জোরপূর্বক গত বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) জমি দখল নিতে আসে। তাদের এই বেআইনি কর্মকাণ্ডে শান্তিভঙ্গের আশঙ্কা থেকে বিষয়টি আমরা পুলিশকে জানাই। পুলিশ তাদেরকে বাধা দিলে তারা ফিরে যেতে বাধ্য হয়।

এদিকে তাদের আরেক ভাই রফিকুল ইসলাম বলেন, তারা বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা তথ্য দিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের বিভ্যান্ত করে যাচ্ছে। ভুঁইফোড় দু-একটি অনরাইন পোর্টালে সংবাদ প্রকাশ করিয়েছে, যার কোনো ভিত্তি নেই। তারা বিভিন্নভাবে দাবি করছে এই জমি তাদের দখলে, কিন্তু এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। সেই ১৯৬৪ সাল থেকেই এই জমিতে আমাদের বসতভিটা, আমার বাবার দান করে যাওয়া কিছু জমির ওপর মসজিদ-মাদরাসা ও কিছু জমির ওপরে আমরা মৎস্য চাষ করে আসছি।

তিনি আরও বলেন, সিরাজুল, মোকছেদ ও ছামছুর এলাকা ত্রাস সৃষ্টি করার চেষ্টা করতেছে। তারা এলাকায় বিভিন্ন মাধ্যমে বলেছে- সোমবার (২৪ এপ্রিল) রাতে লাঠিয়ালবাহিনী দিয়ে জমি দখল করে নেবে। যারা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করবে তাদের মেরে ফেলারও হুমকি দিচ্ছে।

এদিকে ভুক্তভোগী পরিবারবর্গ জানায়, সিরাজ-মোকছেদ গংরা ক্ষিপ্ত হয়ে গত শুক্রবার (২১ এপ্রিল) সন্ধ্যায় এই জমির কিছু অংশের ক্রয়সূত্রের মালিক ফয়জুল্লাহের ভাগনে তরিকুল ইসলাম তরিকে হত্যার উদ্দেশ্যে ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে কুলিয়া ব্রিজের কাছে হামলা চালায়। এ সময় তরিকে এলোপাতাড়ি মারধর করে, এতে তার মাথা ফেটে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। পরে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তরির অবস্থা আশঙ্কাজন বলে জানিয়েছে চিকিৎসকরা।

২০১৩ সালে দেবহাটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর দোহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের কবর রচনা করে মোকছেদ। সেসময় সাতক্ষীরায় রচনা করা প্রতীকী কবর।

উল্লেখ্য, সন্ত্রাসী দলের নেতাদের মধ্যে মোকছেদ গাজী জামায়াত-শিবির ও বিএনপির অর্থ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া হত্যা মামলা, রাজনৈতিক মামলাসহ একাধিক মামলার আসামিও। এ ছাড়া ২০১৩ সালে দেবহাটায় রাজনৈতিক সহিংসতা সৃষ্টি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর দোহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের কবর রচনা করে মোকছেদ। ২০১৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর “শেখ হাসিনার কবর রচনাকারী সেই মোকছেদ আরও বেপরোয়া!” এই শিরোনামে তার বিরুদ্ধে স্থানীয় ও জাতীয় একাধিক সংবাদমাধ্যমে খবরও প্রকাশিত হয়। বর্তমানে এই মোকছেদ আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে দাবি এলাকাবাসীর।

এই অবস্থায় মানববন্ধনে সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট এই সব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে এলাকায় শান্তি বজায় রাখার জন্য অনুরোধ জানান এলাকাবাসী।