নিজস্ব প্রতিবেদক: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, যারা গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে, তারা ৭২-এর সংবিধানের পক্ষে থাকতে পারে না। ৭২-এর সংবিধান ছুড়ে ফেলে নতুন সংবিধান লিখতে হবে।
বুধবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত এক যৌথ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ৩ আগস্ট আমরা শহীদ মিনার থেকেই এক দফা ঘোষণা দিয়েছিলাম। এই এক দফার মধ্যে ছিল ফ্যাসিবাদ ব্যবস্থা বিলোপ এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। আমাদের এক দফার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে গণতন্ত্রকামী প্রতিটি রাজনৈতিক দল ৫ আগস্ট মাঠে নেমে এসেছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে তারা রাস্তায় এসে রক্ত দিয়েছিল। এর মাধ্যমে আমরা শেখ হাসিনার পতন নিশ্চিত করতে পেরেছিলাম।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদ ব্যবস্থা পূর্ণাঙ্গভাবে বিলোপের যে প্রশ্ন, সেটির কিন্তু এখনো সমাধান হয়নি। যারা এক দফা দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছিল, যারা গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে, তারা কখনো ৭২-এর সংবিধানের পক্ষে থাকতে পারে না। কারণ ৭২-এর সংবিধানের মধ্য দিয়েই আমাদের এ ফ্যাসিবাদ কাঠামো সবসময় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। হাসিনার সময়ের একটি কথা ছিল- আমাদের সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে। তাকে যখনই পদত্যাগ করতে বলা হতো, যখনই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা বলা হতো, যখনই নির্দলীয় সরকারের কথা বলা হতো, সবসময়ই তার মুখের একটি কথা আমরা শুনতাম, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নবনির্বাচিত এ আহ্বায়ক বলেন, আজ আমরা দেখেছি, আমাদের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার দোহাই দিয়ে চুপ্পুকে রাষ্ট্রপতি পদে আসীন দেখতে চাচ্ছে। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রতিটি রাজনৈতিক দলের কাছে আহ্বান থাকবে, ৭২-এর সংবিধানের পক্ষে এবং গণঅভ্যুত্থানের প্রশ্নে আপনাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। আপনাদের অবস্থান স্পষ্ট করা জরুরি।
তিনি বলেন, যারা গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে, তারা ৭২ এর সংবিধানের পক্ষে কোনোদিন থাকতে পারে না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে আমরা ৩ আগস্ট ঘোষণা দিয়েছিলাম, ফ্যাসিবাদ ব্যবস্থা বিলোপ হবে। এ ফ্যাসিবাদ ব্যবস্থা বিলোপের মধ্যে অন্যতম ছিল, মুজিববাদী-৭২ এর সংবিধান বিলোপ করতে হবে। ৭২-এর সংবিধানকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে নতুন করে সংবিধান লিখতে হবে, যে সংবিধানের মধ্যে গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট (চেতনা) প্রাধান্য পাবে। ফ্যাসিবাদ কাঠামো কোনোভাবে জেঁকে বসবে বাংলাদেশের মাটিতে, এমন কোনো ধারা নতুন সংবিধানে কোনোভাবেই রাখা যাবে না।
হাসনাত বলেন, একাত্তরের পর যে সংবিধানটি রচিত হয়েছিল, সেটি মূলত আওয়ামী সংবিধান। বাকশালীদের সংবিধান গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে আর প্রাসঙ্গিক নয়। আমরা গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য চাচ্ছি। এ ঐক্যের মধ্য দিয়েই আমরা ৭২-এর সংবিধান ছুড়ে ফেলে দিয়ে নতুন করে সংবিধান লিখব। নতুন সংবিধানে গণমানুষের আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হবে। ৭২-এর সংবিধান বাতিল হয়ে গেলে চুপ্পুর ধারাবাহিকতার প্রশ্নটি আর থাকে না। চুপ্পু অটোম্যাটিকেলি চলে যেতে বাধ্য হবে।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আমাদের আহ্বান, আমরা যে পাঁচ দফা দিয়েছি, সেটি গণঅভ্যুত্থানকে বিপ্লবে রূপান্তরিত করার চূড়ান্ত দফা। পাঁচ দফার মধ্য দিয়েই গণঅভ্যুত্থান বিপ্লবে পরিণত হবে। এর মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ প্রশ্নে আমরা স্থায়ী সমাধানে যেতে পারব।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ, মুখপাত্র উমামা ফাতেমা, সমম্বয়ক সারজিস আলম, আব্দুল কাদের, জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, মুখপাত্র সামান্তা শারমিন, সদস্য মনজুর আল মতিন, আরিফুল ইসলাম আদীব প্রমুখ।
আপনার মতামত লিখুন :