ইতালিতে একদিনেই ২৫০ জনের প্রাণহানি

209

বিশ্বের ১১৫টি দেশে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস সবচেয়ে বেশি ছোবল হেনেছে ইউরোপের দেশগুলোতে। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ইতালিতে। দেশটিতে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর মিছিলে নতুন রেকর্ড যুক্ত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে নতুন করে আরও ২৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগের দিন ১৮৯ জনের মৃত্যু হয়। এরও আগের দিন ১৯৬ জনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ২৬৬ জনের প্রাণহানি ঘটল। যা উৎপত্তিস্থল চীনের বাহিরে সর্বোচ্চ। এতে করে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে রোমীয় শহরটি।

এদিকে মৃতের চেয়ে কয়েকগুণ লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। সবধরনের সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও প্রতিনিয়ত দীর্ঘ হচ্ছে আক্রান্তের মিছিল। যেখান থেকে অনেকেই লাশ হয়ে ফিরছেন।

গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় আড়াই হাজার নাগরিক। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ১৭ হাজার ছাড়িয়েছে। আর অবরুদ্ধটি দেশটিতে ছয় কোটি মানুষকে নেয়া হয়েছে কোয়ারেন্টাইনে। আজ শনিবার এ খবর দিয়েছে চায়না সাউথ মর্নিং পোস্ট।

ভয়বাহ এমন পরিস্থিতি ইউরোপের অন্যান্য দেশেও। যুক্তরাজ্য থেকে শুরু করে ফ্রান্সসহ অন্যান্য দেশগুলোয় দ্রুত সংক্রমণ বিস্তার করায় ইউরোপকে ‘মহামারির কেন্দ্রস্থল’ হিসেবে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

করোনার সংক্রমণ থেকে বাঁচতে খাবার দোকান ও ফার্মেসি ছাড়া সব দোকান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। করোনা ভাইরাসকে বৈশ্বিক মহামারী ঘোষণা করার পর এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইতালি সরকার।

প্রধানমন্ত্রী গিসেপে কন্তে পানশালা, রেস্তোরাঁ, সেলুন ও এই মুহূর্তে জরুরি নয় এমন কোম্পানিগুলোর সব বিভাগ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন।

পুরো দেশজুড়েই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এর আগে দেশটির ১৪টি প্রদেশে ৮ মার্চ থেকে আগামী ৩ এপ্রিল পর্যন্ত জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। কিন্তু এখন তা বাড়িয়ে দেশটির ২০টি প্রদেশের সবগুলোতেই জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।

দেশটির প্রধানমন্ত্রী কন্তে টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে বলেন, এখন আর সময় নেই। যারা সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছেন তাদের সুরক্ষার জন্যই এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

এর আগে দেশজুড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, খেলাধুলা, জিমনেশিয়াম, জাদুঘর, নাইটক্লাব, সিনেমা, মসজিদ এবং অন্যান্য ভেন্যু আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যদিও তা এখন অনির্দিষ্টকালের জন্য করা হয়েছে।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনা ভাইরাসকে মহামারি ঘোষণা করেছে। বুধবার (১১ মার্চ) রাতে সংস্থার প্রধান টেড্রোস অ্যাডানোম গ্রেবিয়াসিস জানান, গত দুই সপ্তাহে ভাইরাসটি চীনের বাইরে ১৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

দ্রুত গতিতে করোনা ভাইরাসের বিস্তার হতে থাকায় গত ৩০ জানুয়ারিতে বিশ্বজুড়ে জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি ঘোষণা করে ডব্লিউএইচও। ওই সময়ে সংস্থাটির প্রধান জানান, এর মাধ্যমে দুর্বল স্বাস্থ্য সেবার দেশগুলোকে সুরক্ষা দেওয়া এবং তাদের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হবে।

আজ সকাল পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে বিশ্বব্যাপী মৃত্যু হয়েছে ৫ হাজার ৩৭৩ জনের। আর আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ সাড়ে ৪০ হাজার ছাড়িয়েছে। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৭০ হাজারেও বেশি মানুষ।