কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধিঃ রাজধানীর কেরানীগঞ্জে প্রতিবন্ধী নারী লতা সরকারকে ধর্ষণ করে শরীরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনার চাঞ্চল্যকর রহস্য উদ্ঘাটন করে মূল আসামী সুজন মিয়াকে (২৫) গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
শনিবার (৩ ডিসেম্বর) মিডিয়া প্রেসব্রিফিংয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেন ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, নিহত বাকপ্রতিবন্ধী লতা সরকার ও আসামি সুজন মিয়া কেরানীগঞ্জ মডেল থানার কলাতিয়া ইউনিয়নে একই গ্রামে বসবাস করতেন। লতা সরকার একটি বালুর গদিতে কাজ করত। সুজন ইশারায় ইঙ্গিতে তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেন। সে তার প্রস্তাবে রাজি হয়। ঘটনার দিন বিকেল বেলায় সুজন বালুর গদির খাটে লতার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে। তারপর লতা সুজনকে বিয়ের জন্য জোর-জবরদস্তি করতে থাকে। লতা সুজনকে বলে যে, সে যদি লতাকে নিয়ে ভেগে না যায় তাহলে সে শারীরিক সম্পর্কের কথা সবাইকে জানিয়ে দেবে। সুজন তখন লতাকে কাপড়-চোপড় নিয়ে রাতে বাড়ির পাশে গাবগাছ তলায় অপেক্ষা করতে বলে। লতা চলে গেলে সুজন লতাকে দূরে কোন নির্জন জায়গায় নিয়ে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে।
ভিকটিম লতা সরকারের সাথে হত্যার পূর্বেও শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছিল ঘাতক সুজন, সেদিন লতাকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার কথা বলে আটি বাজার এলাকাসহ বেশকিছু স্থানে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে শেষে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা শুভাঢ্যা সাবান ফ্যাক্টরী এলাকায় এনে হত্যার উদ্দেশ্যে রাস্তার পাশে একটি শুকনো খাদে ফেলে দেয়। লতা চিৎকার করলে সুজন তার গলা টিপে ধরে পাশেই পড়ে থাকা জমাট পড়া সিমেন্ট এর বস্তার উপর মাথা রেখে ইট দিয়ে মাথা থেতলে দেয়। পরে খাদের ভিতরে নিয়ে লতা সরকারের ব্যাগে থাকা কাপড় দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় লতা সরকারের শরীর ৬৫% পুড়ে যায়। মৃত্যুর আগে লতা সরকার হাতে ইশারায় ঘটনার বনর্না দেন পুলিশকে। পুলিশ তার কথা কিছু বুঝতে না পাড়লে বাকপ্রতিবন্ধী বিশেষজ্ঞ এনে তার কথা গুলোর নোট নেন। পরে বিশেষজ্ঞ লতার তার কথাগুলো উপস্থাপন করেন। তার একদিন পর ভিকটিম লতা সরকারের মৃত্যু হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, কেরাণীগঞ্জ সার্কেল এর নেতৃত্বে ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে ২ ডিসেম্বর পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া থানার তেগাছিয়া বাজার থেকে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডে জড়িত আসামি সুজন মিয়া(২৫) কে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যার কথা শিকার করেছেন। তার সাথে অন্য কেউ জড়িত ছিল কিনা রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে আরো তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে তিনি জানান।
এসময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(অপরাধ তদন্ত) আমিনুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) মোবাশিশরা হাবিবা খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ হিল কাফি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কেরানীগঞ্জ (সার্কেল) শাহাবুদ্দিন কবির, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মাদ শাহ জামান।
উল্লেখ্য, গত ২৮ নভেম্বর রাত সাড়ে দশটায় দিকে ৯৯৯ কল এর মাধ্যমে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা পুলিশ সংবাদ পায় যে, দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানাধীন সাবান ফ্যাক্টরী রোডের পাশে একটি শুকনো খাদের মধ্যে একজন মহিলার শরীরে কে বা কারা আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। তাৎক্ষনিকভাবে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা পুলিশের একটি মোবাইল টিম দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে স্থানীয় জনগনের সহায়তায় অগ্নিদগ্ধ মহিলাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিডফোর্ড হাসপাতাল) ও পরবর্তীতে শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ণ এন্ড প্লাস্টিক সার্জারী হাসপাতাল ঢাকায় নিয়ে ভর্তি করে। অগ্নিদগ্ধ মহিলার সাথে কথা বলতে গিয়ে জানা যায় তিনি একজন বাক প্রতিবন্ধি। তখন দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা পুলিশ সিআইডির ক্রাইমসিনের মাধ্যমে বাকপ্রতিবন্ধি নারীর ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে তার নাম-পরিচয় শনাক্ত করে। পরবর্তীতে পুলিশ ঐ রাতেই ভিকটিম লতা সরকারের কেরাণীগঞ্জ মডেল থানাধীন কলাতিয়ায় অবস্থিত তার পরিবারকে উক্ত ঘটনার সংবাদ দেয়। ভিকটিম লতার ভাইয়েরা জানায় যে, ঘটনার দিন সন্ধ্যা হতে লতা নিখোঁজ ছিল। পরবর্তীতে ভিকটিম লতা বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৯ নভেম্বর রাত সাড়ে ৮ টা মারা যায়। পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এর নেতৃত্বে চৌকস টিম মামলার পাঁচদিন পর মূল আসামি সুজন মিয়াকে শশুর বাড়ি পটুয়াখালী কলাপাড়া গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।