সামসুল ইসলাম সনেটঃ ঢাকার কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন হাটবাজারে প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে মানুষখেকো মাছ বলে পরিচিত অফ্রিকা ও থাইল্যান্ডের নিষিদ্ধ মাছ পিরানহা! থাই রূপচাঁদা বা সামুদ্রিক চান্দা মাছ ভেবে কিনে প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। তাছাড়া ছোট আকারের আফ্রিকান মাগুর মাছও দেশি মাগুর মাছ বলে বিক্রি করতে দেখা গেছে উপজেলার কোনখোলা সাপ্তাহিক মাছের বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে কেরানীগঞ্জের অফিস পাড়া তথা উপজেলা পরিষদের সামনে প্রতি শুক্রবারই বসে বিশাল মাছের হাট। হাটে প্রচুর মাছ পাওয়া যায় বলে উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মাছ কিনতে আসে হাজারো মানুষ। নানা প্রজাতির মিঠাপানির ছোট-বড় মাছের সাথে এখানে বিক্রি হয় সামুদ্রিক ও চাষের মাছ। আর চাষ করা মাছেই একটি প্রজাতি এই পিরানহা। এই মাছের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এর ছোট শক্তিশালী চোয়াল। এর দুই পাটিতে ত্রিশূলের মতো দাঁত এতোটাই ধারালো যে শিকারের দেহ এক নিমেষে ছিন্নভিন্ন করে দিতে পারে।
উপজেলার রোহিতপুর, কলাতিয়া, হযরতপুর, জিনজিরা,শুভাঢ্যাসহ উপজেলার প্রতিটি প্রান্তে, ছোট-বড় বাজারে এবং ফেরী করে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে এ নিষিদ্ধ মাছ। বিশেষ করে শিল্পাঞ্চলগুলোতে বেশি বিক্রি হয় মাছগুলো। দামে কম এবং দেখতে সুন্দর মাছের ক্রেতারা অধিকাংশই গরীব এবং অতি সাধারণ মানুষ। অনেকে জানেনা এটা মানুষখেকো নিষিদ্ধ মাছ।
ঢাকা বিসিক শিল্পনগরী কাঁচাবাজারের মাছ বিক্রেতা বাচ্চু মিয়া জানান, আমরা যাত্রাবাড়ী পাইকারি আড়ৎ থেকে প্রতিদিন মাছ কিনে এখানে বিক্রি করি। অন্য কোন মাছ না পেলেই আমরা এই মাছ নিয়ে আসি। এ মাছের ক্রেতা সব স্বল্প আয়েত ভাড়াটিয়া। স্থানীয়রা এই মাছ কিনেনা। তবে আমরা জানিনা যে এটা নিষিদ্ধ মাছ। এখন থেকে আর চান্দা(পিরানহা) মাছ কিনবোনা।
পিরানহার নিয়মিত ক্রেতা রংপুরের আলামিন বলেন, আমরা গরীব মানুষ, ভালো মাছ কিনে খেতে পারিনা তাই সাগরের চান্দা (পিরানহা) কিনে খাই। আর এটা পিয়াজ দিয়ে ভুনা করলে খেতেও খুব সুস্বাদু। আমরা নিয়মিত এ মাছ খাই। তবে এটা নিষিদ্ধ মাছ আমাদের জানা নেই।
দামে কম হওয়ায় এই মাছের ক্রেতাও অনেক বলে জানিয়েছে একাধিক মাছ বিক্রেতা। মূলত এই মাছ খেলে কোন স্বাস্থ্য ঝুঁকি না থাকলেও পরিবেশগত ঝুঁকি রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
কেরানীগঞ্জ উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সেলিম রেজা জানান,আমরা মাঝে মাঝেই বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালিয়ে অসাধু মাছ ব্যবসায়ীদের জেল-জরিমানা করছি। কিছু অর্থলোভী ব্যবসায়ীরা এ কাজগুলো করে থাকে। আমরা দ্রুত এসব মাছ ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনবো।
উল্লেখ, গত ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে পিরানহা মাছ চাষ, উৎপাদন, পোনা উৎপাদন, বংশ বৃদ্ধি, বাজারে বিক্রি এবং বাজার থেকে ক্রয় সরকারীভাবে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এবং ২০১৪ সালের জুন থেকে আফ্রিকান মাগুরের আমদানি, উৎপাদন, বিপণনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
পিরানহা মাছ, মাছের রেণু ও পোনা আমদানি করলে জেল জরিমানার বিধান রেখে মৎস্য সংঘ নিরোধ আইন-২০১৭ এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিপরিষদ।
এই আইন অমান্য করলে দুই বছরের জেল ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।