সামসুল ইসলাম সনেটঃ দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে অভাব অনাটনের সংসার ঢাকার কেরানীগঞ্জের ঢালিকান্দী গ্রামের ৭৫ বছরের বৃদ্ধা পর্বত শেখের। অন্যের ভিটায় টিনের ছাপড়া বানিয়ে কোন মতে চলছিলো তার কষ্টের সংসার। দুই ছেলের একজন ঋন করে বিদেশে গেলেও ফিরতে হয়েছে খালি হাতে। পুনরায় বিদেশে যেতে প্রস্তুতি চলছিলো ছেলে, সে লক্ষ্যে একাধিক ব্যাংক থেকে উঠিয়েছেন টাকাও। কিন্তু কষ্ট যে তার নিত্যসঙ্গী! থাকার একমাত্র ঘরটিতে লাগা আগুনে পুড়ে ছাই বিদেশ থেকে আনা কয়েকটি কম্বল, কিছু কসমেটিক, ঋন করে আনা প্রায় ৩ লক্ষ টাকা, দুটি পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয় পত্রসহ মূল্যবান সব কাগজপত্র।
আজ ৩ আগস্ট (মঙ্গলবার) সকাল সাড়ে সাতটার দিকে গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুনের সুত্রপাত হয় পর্বত শেখের ঘরে। ঘণ্টাব্যাপী চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে স্থানীয়রা। তবে এর আগে আসবাবপত্রসহ পুরো ঘরটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। নিজের ও ছেলের পরনে থাকা দুটি লুঙ্গি, স্ত্রী ও মেয়ের পরনে থাকা কাপড় ছাড়া কিছুই রক্ষা করা যায়নি আগুনের লেলিহান থেকে।
প্রত্যক্ষদর্শী এক নারী জানায়, হঠাৎ পর্বত শেখের টিনের ঘরটিতে আগুন জ্বলতে দেখে এলাকাবাসী বালতি ভরে পানি এনে ঘণ্টাব্যাপী চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এর আগেই সব পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আর গ্যাস সিলিন্ডার থাকায় অনেকে ভয়ে কাছে আসেনি।
প্রতিবেশী মেহেদী হাসান বলেন, আগুনে পুড়ে পরিবারটি একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেলে। তাদের বাড়ী নেই, খাবারদাবার এমনকি পরনের কাপড় পর্যন্ত নেই তাদের। আমার নিজের গেঞ্জি এবং অন্যদের কাছ থেকে কাপড় এনে দিলাম তাদের।
ভুক্তভোগী পর্বতের স্ত্রী আহাজারি করে বলছিলেন অভাবের সংসারে স্বামী সন্তানকে নিয়ে কোনোরকম ঘরটিতে আমার দিন কাটত। ঘর পুড়ছে আমার দুঃখ নাই, আমি গাছ তলায় থাকবো কিন্তু ঋনের টাকা শোধ করবো কি ভাবে? আমার টাকাও যে পুড়ে গেলো! আমার মরা ছাড়া কোন পথ নাই!
এব্যাপারে হযরতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আয়নাল হক জানান, ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক! আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ভুক্তভোগীকে নগদ ১০ হাজার টাকা সহায়তা করেছি। ইনশাআল্লাহ অন্যান্য সহায়তাও দেওয়া হবে অসহায় পরিবারটিকে। যে যার সাধ্যমতো কিছু সহায়তা করলে পরিবারটি হয়তো বেঁচে যাবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত দেবনাথ বলেন,ব্যাপারটি আসলেই দুঃখজনক, ভুক্তভোগীর ব্যাপারে আমাকে কেউ অবহিত করেনি। তথ্য পেলে সহায়তার আশ্বাসও দেন এ কর্মকর্তা।